সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ০৫:২০ অপরাহ্ন
মো: নাসির খান, শরীয়তপুর প্রতিনিধি:: শরীয়তপুর মাদারীপুরসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে ২০১৯ সালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ৩৫ কিলোমিটার চারলেনের আঞ্চলিক মহাসড়কের অনুমোদন দেয়। তবে ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়া ও বার বার রিটেন্ডারের কারনে কাজ চলছে মাত্র ৬ কিলোমিটারের। পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও বাকি ২৯ কিলোমিটারের কাজ এখনো শুরু না হওয়ায় বাস্তবায়ন নিয়ে এখন জনমনে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। তবে সড়ক বিভাগ বলছে জনদুর্ভোগ লাগবে জাটিলতা নিরসন করে সড়কটি বাস্তবায়নে তারা কাজ করে যাচ্ছে।
জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে চট্টগ্রাম-মোংলা পোর্ট টু পোর্ট দূরত্ব কম হওয়ায় শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কটি দিয়ে চলাচল করে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক। আর এসব বিবেচনায় সম্প্রসারণ, মজবুতকরণ, সার্ফেসিং ও ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের জন্য সদরের মনোহর বাজার থেকে ভেদরগঞ্জ উপজেলা সংলগ্ন চাঁদপুরের ইব্রাহিমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি ২০১৯ সালে চার লেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প হাতে নেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
২০২১ সালে চারটি প্যাকেজে কাজ করার জন্য কার্যাদেশ প্রদান করা হলেও সড়কটির কয়েকটি অংশের জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করতে না পারায় কাজ শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কয়েক দফা টেন্ডার বাতিল শেষে সর্বশেষ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে মোট ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দরপত্র আহ্বান করে মূল্যায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
এদিকে সড়কের কাজ শুরু না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ২৯ কিলোমিটার অংশ বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এছাড়াও পণ্য পরিবহন ও চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছে যাত্রী ও চালকরা। ধীরগতির ফলে ঘটছে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও।
প্রতিনিয়ত খুলনা থেকে চট্টগ্রামে পণ্য পরিবহন করেন ট্রাকচালক রতন মণ্ডল। শরীয়তপুর অংশের সড়কের বেহাল দশার কারণে এই পথটুকু পাড়ি দিতে তার অপচয় হয় কয়েক ঘণ্টা সময়। এতে সময়মতো বাজার না ধরার পাশাপাশি ডাকাতির কবলে পড়তে হয় বলে জানান এই ট্রাকচালক।
বিকাশ দাশ বলেন, এই রাস্তার কারণে পার্টির কাছে ঠিক সময়ে মালামাল পৌঁছে দিতে পারি না। আমাদের অনেক কাঁচামাল নষ্ট হয়। আর বেশি রাত হলে ডাকাতিও হয়। আমরা চাই রাস্তাটির কাজ দ্রুত শেষ করা হোক।
বাসচালক আকবর বলেন, এই সড়কটির মতো এমন বেহাল অবস্থা আর কোথাও নেই। এই সড়কে এলেই গাড়িতে নানা সমস্যা দেখা দেয়। ঝাঁকুনিতে টায়ার বার্স্ট, ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। আমরা খুব ক্ষতির মুখে আছি। আমরা চাই রাস্তাটি মেরামত করা হোক।
বাসযাত্রী ফারুক মান বলেন, এই রাস্তা দিয়ে রোগী নেওয়া সম্ভব না। এটা মনে হয় এই জেলার সবচাইতে খারাপ রাস্তা। অন্তত মানুষের কথা চিন্তা করে হলেও রাস্তাটির কাজ শেষ করা খুবই দরকার।
এদিকে সড়কের ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ আশপাশের বাসিন্দারা। ঘরের টিনের চালায় পড়েছে ধুলার আস্তরণ, ধারণ করেছে লাল মেটে রং।
সালেহা বেগম নামের এক গৃহবধূ বলেন, বাড়িতে ধুলাবালির কারণে থাকা যায় না। রান্নায় বালু এসে পড়ে, বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে যায়। আমরা এই রাস্তার কারণে খুব বিপদে আছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন রাস্তা করা হোক।
অপরদিকে অধিগ্রহণের ৫ বছরেও টাকা বুঝে পাননি কয়েকটি অংশের জমির মালিকরা। টাকা বুঝে পাওয়ার পাশাপাশি দ্রুত সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি তাদের।
রুদ্রকর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা কানাই লাল তালুকদার বলেন, ২০২১ সালে এই রাস্তার জন্য আমাদের জমি অধিগ্রহণ করেছে সরকার। আমরা দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে জমি ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু এত বছরেও রাস্তার কোনো কাজ করেনি, আমাদের টাকাও দেয়নি। আমরা অনেক বিপদের মধ্যে আছি। আমরা চাই দ্রুত আমাদের অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধ করে রাস্তার কাজ চলমান করুক।
শরীয়তপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন দৈনিক বলেন, চারটি প্যাকেজের মধ্যে একটি প্যাকেজে শুধু ভূমি অধিগ্রহণ হয়েছে। সেই অংশের কাজ চলমান রয়েছে। আর বাকি তিনটি প্যাকেজে খুবই সামান্য ভূমি অধিগ্রহণ হয়। পরে ঠিকাদাররা কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে চুক্তি বাতিল করে আবার রিটেন্ডার করা হয়। কিন্তু পরে সেগুলো সুপারিশ করে পাঠালেও নানা কারণে অনুমোদন হয়নি। বর্তমানে আবার রিটেন্ডার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে। ১৯টি এলএ কেসের মধ্যে ১১টি সম্পন্ন প্রায়। তবে আরেকটি সমস্যা হলো ভূমি অধিগ্রহণের জন্য যে ৪৩১ কোটি টাকা রাখা আছে তা পুরোটাই খরচ হয়ে যাচ্ছে ১১টি কেসের জন্য, আরও ৮টি কেসের জন্য যে ভূমি অধিগ্রহণ রয়েছে তার জন্য আরও অন্তত ৩০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। এজন্য ডিপিপি সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে। তাছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ শেষের দিকে। এই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, সড়ক বিভাগ থেকে ২০১৯ সালে প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও সড়কের অ্যালাইনমেন্ট প্রত্যাশী সংস্থা কর্তৃক একাধিকবার পরিবর্তনের ফলে এটি চূড়ান্তভাবে প্রস্তাব পায় ২০২২ সালের দিকে। যার ফলে কাজটি দেরিতে শুরু করতে হয়েছে। আমরা এরইমধ্যে ১৯টি এলএ কেসের মধ্যে প্রত্যাশী সংস্থাকে ৭টি কেসের জায়গার দখল বুঝিয়ে দিয়েছি। বাকিগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি দ্রুত জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হবে।